ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ , ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​বিদ্যুৎচুরির হোতাদের কি কিছুই হবে না?

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ১৯-১১-২০২৪ ০৪:১৭:০৫ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৯-১১-২০২৪ ০৪:১৭:০৫ অপরাহ্ন
​বিদ্যুৎচুরির হোতাদের কি কিছুই হবে না?
এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে গ্রাহকের সঙ্গে যোগসাজশ করে বিদ্যুৎচুরির ঘটনার মূল অভিযুক্তরা। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন (ডিপিডিসি) কোম্পানির কাকরাইল ডিভিশনের একটি চক্রের সহায়তায় বিদ্যুৎচুরির মহোৎসবের ঘটনা নিয়ে গত ৫ নভেম্বর বাংলা স্কুপে ‘গ্রাহকের সঙ্গে যোগসাজশ করে বিদ্যুৎচুরি’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে। তবে এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন হলেও তাদের কার্যক্রম প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

বিদ্যুৎচুরির ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ। বাংলা স্কুপের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের পর ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নির্দেশে দ্বিতীয় দফায় গত ১১ নভেম্বর তিন সদস্য বিশিষ্ট আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহবায়ক হলেন সংস্থাটির সেক্রেটারি কে এম সালাউদ্দিন। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন আইসিটির ডিজিএম মো. কামরুল আহছান ও প্রশাসন বিভাগের ম্যানেজার মো. রায়হান উদ্দিন মোল্লা। এই কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। 

সূত্র জানায় বিদ্যুৎ চুরির ঘটনায় প্রথম তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন নিয়েও অনেক প্রশ্ন উঠেছে। ওই প্রতিবেদনে কাকরাইল ডিভিশনের মূল অভিযুক্ত প্রকৌশলীদের বাদ দিয়েই দায়সারাভাবে রিপোর্ট দেওয়া হয়। সূত্র আরও জানায়, ওই তদন্ত প্রতিবেদনে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ চুরি  হয়েছে তারও সঠিক তথ্য দেওয়া হয়নি। ঐ তদন্ত কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ডিপিডিসির এক প্রভাবশালী কর্মকর্তার প্রভাবের কারণে তদন্ত কমিটি বিদ্যুৎ চুরির পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দিতে পারেনি। সংস্থাটির আরেকটি সূত্র জানায়, সংশ্লিষ্ট ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলীকে বাঁচাতে একাধিক প্রকৌশলী এখন মাঠে সক্রিয়। 

অন্যদিকে কাকরাইল ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান ভুঁইয়া নিজের দায় এড়াতে বাংলা স্কুপে প্রতিবেদন প্রকাশের পর মিটার রিডার আব্বাসকে চাকরিচ্যুত করে। কিন্তু সেই চাকরিচ্যুতির পত্রে প্রতিবেদন প্রকাশের দুইদিন আগের তারিখ দেখানো হয়। 

এদিকে, যে শীর্ষ কর্মকর্তা প্রথম তদন্ত কমিটিকে প্রভাবিত করেছিল তার নির্দেশেই চলছে দ্বিতীয় কমিটির তদন্ত । 
সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত গ্রাহককে বিদ্যুৎচুরির দায়ে জরিমানার আওতায়ও আনা হয়নি। যে দুটি মিটার কাকরাইল স্টোরে জমা হয়নি, তার সন্ধানও এখন পর্যন্ত মেলেনি। অপর এক সূত্র জানায়, সংস্থাটির প্রভাবশালী ওই শীর্ষ কর্মকর্তার কারণে ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান ভুঁইয়ার বিরুদ্ধেও কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারছেন না ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

প্রশ্ন উঠেছে, বিদ্যুৎচুরির হোতাদের কি কিছুই হবে না?

ডিপিডিসির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বিদ্যুৎচুরির ঘটনায় প্রথম তদন্ত কমিটির রিপোর্টে অনেক ঘটনাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওই গ্রাহকের আঙ্গিনায় বিদ্যুতের যে চেক মিটার এখন বসানো হয়েছে তার এক মাসের রিডিং পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকার বিদ্যুৎ চুরি হয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে ওই গ্রাহক কাকরাইল ডিভিশনের কিছু অসাধু প্রকৌশলী ও কর্মচারিদের যোগসাজসে বিদ্যুৎ চুরি করে আসছিলো। 

ঘটনার বিষয়ে কাকরাইল ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান ভুঁইয়ার সঙ্গে মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে এই প্রতিবেদককে এড়িয়ে যান। 

বাংলা স্কুপের প্রকাশিত প্রতিবেদনমতে, কাকরাইল ডিভিশনের মো. মুসা মুজিব গং নামে এক বিদ্যুৎ গ্রাহক তাঁর বাড়ির আঙ্গিনায় একটি আবাসিক ও একটি বাণিজ্যিক মিটার সংযোগ নিয়ে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকার বিদ্যুৎ চুরি করছেন। আর এই চক্রের সঙ্গে ওই ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান ভূইয়ার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযুক্তরা জানিয়েছেন। সূত্রের দাবি, কাকরাইল ডিভিশনের মুন পাওয়ার ইন্জিনিয়ারিং কোম্পানির বাৎসরিক (সিএসএস) ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মিটার রিডার আব্বাস, সুপারভাইজার (কর্মাশিয়াল) দিলীপ কুমার ত্রিপুরাসহ বেশ কয়েকজন এই চক্রের সঙ্গে জড়িত।

বাংলা স্কুপ/ প্রতিবেদক/ এনআইএন/এসকে 

​গ্রাহকের সঙ্গে যোগসাজশ করে বিদ্যুৎচুরি!
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ